শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞান শিক্ষাকে সহজ করতে পরিচিত শব্দ ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

তরফ নিউজ ডেস্ক : বিজ্ঞান গবেষণা এবং গবেষণা লব্ধ জ্ঞান মানুষের কল্যাণে সহজভাবে ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান শিক্ষাকে সবার কাছে সহজ ও বোধগম্য করতে বিষয়বস্তু তৈরিতে পরিভাষার পরিবর্তে পরিচিত শব্দ ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে শব্দগুলো বহুল প্রচলিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত সেগুলো যে ভাষাতেই আসুক আমাদের সেটাই গ্রহণ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আন্তর্জাাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে শব্দগুলো বহুল প্রচলিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত সেগুলো যে ভাষাতেই আসুক, আমাদের সেটাই গ্রহণ করতে হবে। সেখানে পরিভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে পরে কোন কিছুই বুঝবো না, বলতেও পারবোনা, সেটা যেন না হয়। কারণ সবজায়গায় প্রতিশব্দ বা পরিভাষা করতে হবে আমি সেটা বিশ^াস করিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞানের এই যুগে বিজ্ঞান যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষাও রয়েছে, ইংরেজী, ফ্রেঞ্চ বা অন্য ভাষাও রয়েছে, যা এর ভেতর যুক্ত হয়ে গেছে। আর আমাদের বাংলা ভাষায় কিন্তু ৮ হাজার ভাষার শব্দ মিলে মিশে গেছে। কাজেই এ ব্যাপারে খুব বেশি ‘রক্ষণশীল’ না হয়ে প্রচলিত শব্দগুলো, প্রচলিত বিজ্ঞানের ‘টার্মস’গুলো ব্যবহার করেই বাংলা ভাষায় সহজভাবে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাছে আমার এটা অনুরোধ থাকবে মাতৃভাষা চর্চা এবং গবেষণার পাশাপাশি কিভাবে ভাষাকে মানুষের ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য বা সহজবোধ্য করা যায় সে বিষয়টাও দেখতে হবে। এই বিষয়টা নিয়েও গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন ইউনেস্কোর এদেশীয় প্রতিনিধি এবং হেড অব অফিস বিয়েট্রেস কালডুন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক স্বাগত ভাষণ দেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো.বেলায়েত হোসেন তালুকদার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন দূতাবাস, মিশন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাগণ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরু জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশনার পর ভাষা শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা ছাড়া এগুনো যায়না। স্বাস্থ্য,শিক্ষা, শিল্প এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয় সহ সকল ক্ষেত্রেই গবেষণা একান্ত অপরিহার্য।

বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষণা এবং গবেষণা লব্ধ জ্ঞান যেন মানুষের কল্যাণে সহজভাবে ব্যবহার হয়, সেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিভাষা ব্যবহারে তিনি সতর্ক হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘কনটেন্ট’র বাংলা শব্দ ‘আধেয়’ কিন্তু তা বললে অনেকেই বুঝবেনা। কিন্তু ‘কনটেন্ট’ বললে বুঝবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বিজ্ঞান চর্চা এবং বিজ্ঞান গবেষণাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলেই যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ পুনর্গঠনকালে আমাদের শিক্ষা কমিশন গঠনে তখনকার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

আমাদের কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটে বাংলা কনটেন্ট তৈরী করার পাশাপাশি বাংলা কি বোর্ডের ব্যবহারকে আরো সহজ করে দেয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে কাজ চলছে।

আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে এখন আমাদের উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা করতে হলে ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা, বিজ্ঞান চর্চা এবং বিজ্ঞান গবেষণা সহ সব বিষয়ে গবেষণা একান্তভাবে দরকার। কাজেই সেদিকে দৃষ্টি রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী মাতৃভাষা নিয়ে চর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার এবং নতুন নতুন আবিস্কার বিষয়ক বিভিন্ন প্রকাশনাকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের কাছে সহজবোধ্য করে তুলে ধরার প্রয়াস নেয়ার জন্য মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটকে পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, বিজ্ঞানের যুগে যেসব নতুন নতুন আবিস্কার হয় সেগুলো আমাদের দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে আরো সহজভাবে কিভাবে সুযোগ সৃষ্টি করা যায়, বিষয়টা দেখতে হবে। তবে, প্রচলিত বৈজ্ঞানিক শব্দগুলোর পরিভাষা তৈরী করে সেগুলো আরো দুর্বোধ্য না করে ফেলাই ভাল। সেগুলো ব্যবহার হয়ে এক সময় আমাদের বাংলা ভাষার সঙ্গেই মিশে যাবে।

তাঁর সরকার ৯টি ভাষার একটি অ্যাপস তৈরী করে দেয়ার পাশাপাশি ফ্রিলান্সারদের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান গ্রামের তৃণমূল মানুষের ঘরে বসে কম্পিউটারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে তাঁর সরকারের গৃহীত লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রকল্পও তুলে ধরেন।

তাঁর সরকার ফ্রিল্যান্সারদের রেজিষ্ট্রেশন এবং সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে পরিচিতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সমস্যা দূর করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন ফ্রিলান্সাররা বিদেশে যেমন কাজ করতে পারছে। তেমনি বাংলা কনটেন্ট ভালো তৈরী করতে পারলে দেশেও তাদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, কনটেন্টগুলো তৈরী করা, বাংলায় সেটার ব্যবহার এবং ব্যাপক প্রচার এবং একেবারে ছোটাবেলা থেকেই তারা যেন এগুলো শিখতে পারে সে ব্যবস্থাটা করা জরুরী বলে আমি মনে করি। এজন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার বহুমুখীকরণের উদ্যোগেরও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছি। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠাই কিন্তু ধাপে ধাপে আমাদেরকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় পেয়েছি। একটি জাতি রাষ্ট্র পেয়েছি।

অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায়ে কানাডা প্রবাসী দুই বাংলাদেশী রফিক এবং ছালামের প্রচেষ্টাকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি কেবল আমাদের শহীদ দিবস বা ভাষা দিবস নয়, সমগ্র বিশে^র মাতৃভাষা ভাষীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। পৃথিবীর অনেক দেশ আজকে দিবসটি পালন করে। বাঙালি জাতি হিসেবে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলতে চাই এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমানতালে এগিয়ে যেতে চাই।
তাঁর সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও ভাষার মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। সবাই এখন মোবাইলে এসএমএসসহ নানা সেবায় বাংলা লিখতে পারে। নৃগোষ্ঠীদের ভাষা ও বর্ণমালাকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষার জন্য আমরা ২০১৭ সাল থেকে তাদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন করেছি। এ বছর তাদের প্রায় ৩৩ হাজার বই দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিজ্ঞান মনস্ক এবং মেধাবী। কাজেই তাঁদের মেধা বিকাশের একটু সুযোগ করে দিলে অনেক অসাধ্য তাঁরা সাধন করতে পারবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com